Apr 16, 2020 সম্পাদনা- সোহেল রেজা কলাম, নেত্রকোনার প্রিয় মুখ
আসলাম আহমাদ খান, নিউ ইয়র্ক, ইউএসএ:
অদৃশ্য জীবানু ঘাতক করোনার বিষাক্ত ছোবলে সারা বিশ্বেই এখন ক্রান্তিকালে। মানুষের মিথ্যা অহমিকার আস্ফালনটা বেরিয়ে পড়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদেরকে যারা রাজা উজির মনে করি সবাই এক কাতারে। মানুষের জীবনকে নিরাপদ রাখার জন্য নিজের জীবন তুচ্ছ করে মাঠে আছেন ডাক্তার, নার্স , স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ , সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসসহ প্রশাসনের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সমূহ। আছেন সংবাদ মাধ্যমের নিবেদিতপ্রাণ সাংবাদিকবৃন্দও । বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকদের বেতন ভাতা থাকলেও মফস্বলের সাংবাদিকদের তা-ও নেই।সৌভাগ্যবানদের নামমাত্র ভাতা আছে। বিজ্ঞাপন যোগাড় করতে পারলে কমিশন আছে, তবে কতদিন পর কমিশনের টাকা হাতে আসে সেটাও একটা প্রশ্ন। আর বছরে কয়টা বিজ্ঞাপনই বা যোগার করা যায়, সেও আরেক প্রশ্ন। কখনও তিরষ্কার , কখনো বা মানুষের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেও চলতে হয়। নিজের পক্ষে গেলে বাহাবা দেই, বিপক্ষে গেলে নিন্দার ঝড় তুলি। তবুও পেশাটাকে ভালোবেসে এই দুর্যোগেও মাঠে আছেন তারা। মফস্বলের সেই সমস্ত নিবেদিতপ্রাণ সাংবাদিক বৃন্দকে কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানাতেই আমার আজকের এই লিখা। লিখাটা দয়া করে যারা পড়বেন , মূল্যায়ন না ভেবে স্মৃতিচারণ হিসেবে বিবেচনা করার অনুরোধ করছি। আমার আজকের এ লিখা যাকে ঘিরে উনি হচ্ছেন নেত্রকোনার বারহাট্টা প্রেসক্লাব এর সাধারন সম্পাদক, নেত্রকোনা জেলা প্রেসক্লাবের সদস্য সাংবাদিক ফেরদৌস আহমেদ বাবুল ।
পেশায় ব্যাংক কর্মকর্তা হলেও মানুষের কাছে সাংবাদিক হিসেবেই পরিচিতি। পরিচয়ের পর থেকে জীবনের একটি দিনের জন্যও সাংবাদিকতা থেকে বিচ্ছিন্ন হতে দেখিনি। ঝড় বন্যা দুর্যোগ মহামারী থেকে শুরু করে সমাজের ক্ষত , সমস্যা , উৎসব আনন্দের সংবাদ , মফস্বলের মানুষের কথা ও জীবন চিত্র তুলে ধরেছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দৈনিকের পাতায়।
নেত্রকোনা তখন সবেমাত্র মহুকুমা থেকে জেলা হয়েছে। বারহাট্টা থানা থেকে হয়েছে উপজেলা। উনার আগেও সাংবাদিক এলাকায় যারা সাংবাদিক ছিলেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি , ফেরদৌস আহমেদ বাবুল আধুনিক সাংবাদিকতার সূচনা করেছেন। শুধু তাই নয় একদল তরুণ সাংবাদিককেও এ পেশায় আসা ও টিকে থাকার জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন। গত কয়েকদিন আগেও দেখলাম বারহাট্টার কিছু তরুণ প্রতিভাবান সমাজকর্মীকে নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে।বারহাট্টার সামাজিক পরিবেশ ছিল ভিন্ন। থাকি সেথা সবি মিলি নাহি কেহ পর – কবিতার মতো। বারহাট্টা বাজারে তখন বর্তমান সময়ের মতো ঘনবসতি ছিল না। মেইন রোডের উপর হাতে গুনা যেতো এমন নির্দিষ্ট কিছু বাসা ছিল এবং একটি বাসা থেকে আরেকটি বাসার দুরত্ব ছিল অনেক। বারহাট্টা কলেজ তখন ছিল না। মানসদের বাড়ির আশে পাশে বরশি দিয়ে মাছ ধরার জন্য যেতাম। ঢাকা থেকে সংবাদ পত্র আসতো ট্রেনে। কখনো কখনো এক/দুই দিন পরেও আসতো। বারহাট্টার রাস্তার তখন বাস চলতো না। ট্রেনই ছিল জেলা, বিভাগীয় শহর কিংবা রাজধানীর সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম, তাও অপেক্ষা করতে হতো কখন ট্রেন আসে। স্টেশান মাস্টারকে জিজ্ঞাসা করতে হতো ৯ টার ট্রেন কয়টায় আসবে ? তখনও কিছু কিছু কয়লার ইন্জিন চালু ছিল। মাঝে মাঝে ট্রেন লাইনচ্যুত হলে পা চরণই ছিল একমাত্র ভরসা। মনে পডে নেত্রকোণায় কোন একটি প্রতিযোগিতায় গিয়েছিলাম, সন্ধ্যায় ট্রেন ফেল করার পর ছেলে মেয়ে সবাই হেটে বারহাট্টা এসেছিলাম। মনসুর স্যার ও গিরিন্দ্র স্যার ছিলেন সাথে। সারাটা রাস্তা স্যারদের গল্প শুনতে শুনতে এসেছিলাম।পরে বড় হয়ে বুঝেছিলাম হাঁটার কষ্ট যাতে টের না পাই এজন্য স্যারেরা একটার পর একটা গল্প করে আমাদেরকে মন্ত্রমুদ্ধ করে রেখেছিলেন। বারহাট্টার রাস্তায় তখন রিক্সা চলতো না। চলবে কি করে? রাস্তাই যে ছিল না। বারহাট্টার বর্তমান মেইন রোড ছিল ইট আর সুডকি মেশানো খানাখন্দকে পরিপূর্ণ। রাস্তার উপরে কতযুগ আগে যে বসানো হয়েছিল ইটের সলিং ভাঙতে ভাঙতে হয়ে গিয়েছিল সুরকি। সেই ভাঙা ইট , সুরকি মেশানো রাস্তা হয়ে গিয়েছিল খালি পায়ে পথ চলা শিশু কিংবা মহিলাদের পায়ের জন্য যমদূত। একুশে ফেব্রুয়ারিতে খালি পায়ে প্রভাত ফেরী করার সময় হাড়েহাডে টের পাওয়া যেতো। যে কারণে মানুষ মূল রাস্তা ছেড়ে পাশের মাটির পথ দিয়ে হাটতো। মানুষ কৃষিপন্য পরিবহন করতো ভাড়বাঁশ দিয়ে কিংবা মাথায় করে। ধান-পাট পরিমাণে বেশী হলে ছিল ঘোড়া। বর্ষাকালে নৌকা। কংস নদীতে ব্রীজ ছিল না। যতীন্দ্র দা’র গুদারার নৌকাই ছিল ভরসা। বাজার বারে অর্থাৎ শনি ও মঙ্গলবারের হাটের দিন অধীক মানুষকে সুবিধা দেয়ার জন্য নৌকা চলে আসতো বাবলুদের বাসার পাশে ঘাটে। নৌকা ডুবির ঘটনাও ঘটতো অহরহ। একটা মাত্র রিক্সা ছিল সাহেদ আলীর মাইকের দোকানে। যেমন মাইক তেমন রিক্সা। শাহেদ আলীর মাইক নিয়ে কোন অনুষ্ঠান কেউ শেষ করতে পেরেছে বলে আমার জানা নেই। কখনো কখনো মাইকের আওয়াজের চেয়ে গলার আওয়াজই ছিল শক্তিশালী। কখনো আওয়াজ শুনা গেলেও তার সাথে নিশ্চিত যোগ হতো প্যাঁ পুঁ শব্দের সঙ্গিত। সেই ভাঙ্গা রাস্তায় চলা শুরু করলে ঝাঁকুনির শব্দে আশে পাশের মানুষ টের পেতো শাহেদ আলীর রিক্সা আসছে। তবুও মন্দের ভালো ওটাই ছিল সবেধন নীলমণি।
অন্যান্য সকল সীমাবদ্ধতার মতো হাতের কাছে কিংবা বাসায় ছড়ানো ছিটানো বিনোদন ছিল না। স্কুল থেকে আসার পর বিকেলে খেলতে যেতাম সি.কে.পি’র খেলার মাঠে। বাকী সময়টাতে কিংবা ছুটির দিনে বিনোদন বলতে ছিলো বন্ধু- বান্ধবদের সাথে আড্ডা। শ্যামল, মোস্তাক, মামুন, বাবলু , দেবাশীষ, মন্টুর সমন্বয়ে সংঘবদ্ধ আড্ডাবাজ চক্র ছিল আমাদের। পরিধি ছিল বাসার আশে পাশেই। কখনো গার্লস স্কুলের ভেতরে, কখনো ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনে, কখনো বাবলুদের বাসা, কখনোবা হায়দারদের বাসা সংলগ্ন বন্ধু খসরুর ভাড়া বাসা, কখনো বন্ধু ইদ্রিস আলীর তীব্র বিরক্তি উপেক্ষা করে বলা যায় একরকম লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করেই তারা ভাড়া বাসা কিংবা বাসা সংলগ্ন উকিলের চেম্বারে। মোদ্দাকথা আড্ডার পরিধি ছিল বাসার আশে পাশেই। বারহাট্টায় তখন বিদ্যুৎ ছিল না। ছিল না ঘনবসতি। কখনো কখনো সন্ধ্যার পরে রাস্তায় চলতে ভয় করতো। যে কারণে সন্ধ্যার পরে প্রত্যেকের বাসায় ফেরা ছিল বাধ্যতামূলক। শুধু একুশে ফেব্রুয়ারি , বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময় দল বেঁধে অনেক রাত পর্যন্ত বাসার বাইরে থাকতাম। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দিনের বেলার বাহাদুর ছিলাম আমরা। এলাকায় টহল দিতাম ভাবে সাবে এমন যে হর্তাকর্তা আমরাই। সরকারী কর্মচারী বাদে হাতে গুনা কিছু মানুষ ভাড়া বাসায় থাকতো। বারহাট্টার বর্তমান হাসপাতাল তখন নির্মিত হয়নি। হাসপাতাল ছিল সি.কে.পি. হাই স্কুলের সামনে। হঠাৎ একদিন আবিষ্কার করলাম বাবলুদের বাসার পাশের বাসায় একজন মানুষ একটি রুম ভাড়া নিয়েছে। লোকটি নাকি আবার সাংবাদিক। আমাদের ভাব সাবটা এমন যে, বলা নাই কওয়া নাই- চলে এসেছে এখানে। একেবারে আমাদের পাড়ার ভেতরে ? পাহাড়ায় রাখতে হবে। বেড়ার ছিদ্র দিয়ে উঁকি মেরে দেখতাম- শ্যামলা লিকলিকে গড়নের লোকটা বাসার ভেতরে কি করতো না করতো। কয়েকদিন মনে হয় এটা আমাদের ডিউটি হয়ে গিয়েছিল। আস্তে আস্তে পরিচয়, পরিচয় থেকে প্রেম না হলেও হৃদ্যতা। উনার ব্যক্তিত্ব , স্নেহ , ভালোবাসা ও উদারতা দিয়ে একদিন আমাদের সকলের প্রিয় মানুষ হয়ে উঠেছিলেন। এখনও আছেন। এখনও আগের মতোই সুন্দর করে কথা বলেন আমাদের আত্মার আত্মীয় ফেরদৌস ভাই। সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপার থেকেও মনে হয় আপনি আমাদের মাঝেই আছেন। আপনার জন্য শুভ কামনা ফেরদৌস ভাই।
May 24, 2020 ০
May 24, 2020 ০
May 24, 2020 ০
May 24, 2020 ০
May 24, 2020 ০
নেত্রকোনায় পিসিআর ল্যাবের দাবিতে ভার্চুয়াল আন্দোলন...
May 02, 2020 ০
করোনা প্রাদুর্ভাব: বাঙালির অবাধ্যতা ও আমাদের অসহায়ত্ব
Apr 27, 2020 ০
আমি সেই সামান্য একজন নার্স
Apr 22, 2020 ০
করোনা বিজয়ী যোদ্ধাদের অভিনন্দন
Apr 16, 2020 ০
May 24, 2020
May 24, 2020
May 24, 2020
May 24, 2020
May 24, 2020
May 24, 2020
May 24, 2020
May 24, 2020
May 24, 2020
May 24, 2020
May 19, 2018
May 08, 2018
Nov 25, 2018
Jul 10, 2018
Jul 06, 2018
Jul 29, 2018