Jun 20, 2020 সম্পাদনা- সোহেল রেজা নেত্রকোনার প্রিয় মুখ
আলহাজ ওসমান আলী (রহ.)— শুধু একটি নাম নয়। একটি প্রতিষ্ঠান। একটি ইতিহাস। একাধারে তিনি ছিলেন ভাষাসৈনিক, শিক্ষাবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, সমাজসেক, বহু দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক। সর্বোপরি তিনি ছিলেন সমাজের উদাহরণতুল্য ব্যক্তিত্ব। অনুসরণীয় মানুষ। সাধারণ শিক্ষার সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত দ্বীনদার ও আল্লাহওয়ালা মানুষ। নির্লোভ ও নিরহঙ্কার। ইহকালের তুলনায় পরকাল ছিল তার জীবনে অধিক প্রাধান্যিত্ব।
ঔপনিবেশিক বাংলাদেশে কালের আঘাতে মুখ থুবড়ে পড়েছিল মুসলিম শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতা। মুসলমানরা ভুলতে বসেছিল তাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা। এহেন পরিস্থিতি থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের উত্তরণে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ উপমহাদেশে পাঠিয়েছিলেন হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.)-এর আদর্শে উদ্ভাসিত সুফি-আউলিয়াগণকে। দ্বীনদার ব্যক্তিত্বের আগমন ঘেটেছে এ ঘরাধামে। শাহ সুফি আলহাজ ওসমান আলী ছিলেন তাদের মধ্যেই একজন অগ্রসেনানী।
১৯২৭ সালের ২৯ এপ্রিল শুক্রবার নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা থানার মন্ডলেরগাতী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ওসমান আলী। তার বাবা নাম মাহমুদ জান তালুকদার ও মায়ের নাম আয়েশা খাতুন। ১৯৩৪ সালে ৭ বছর বয়সে নিজ গ্রামের মক্তবে ভর্তি হন তিনি। ১৯৩৪-৩৬ পর্যন্ত সেখানে পবিত্র কোরআন শিক্ষা করেন। এরপর ১৯৩৭ সালে ভর্তি হন পার্শ্ববর্তী বড়কাপন গ্রামে প্রাইমারি স্কুলে। ১৯৪০ সালে এ স্কুল থেকে চতুর্থ শ্রেণীতে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৪১ সালে ভর্তি হন রানীগাঁও মিডিয়া ইংলিশ স্কুলে ৫ম শ্রেণীতে। সেখান থেকে পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণী পড়াশোনা করে ১৯৪৩ সালে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন দুর্গাপুর থানার বিরিশিরি মিশন স্কুলে এবং অষ্টম শ্রেণী পাস করে ১৯৪৫ সালে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন বারহাট্টা থানার ভাউমী হাইস্কুলে। নবম ও দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে ১৯৪৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ম্যাট্রিক পাস করেন। অতঃপর ভর্তি হন কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজে। ১৯৫১ সালে এ কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। বিএ ক্লাসে অধ্যয়নকালে কিছু দিন তিনি কলমাকান্দা হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন।
বিএ পাস করার পর দুর্গাপুর থানার কালসিন্দুর হাইস্কুলে যোগদান করার মাধ্যমে শুরু হয় ওসমান আলীর কর্মজীবন। সেখানে বছরখানেক শিক্ষকতা করেন। এ সময় পূর্বধলা থানার দুধী গ্রামের মরহুম জাহেদ আলীর মেয়ে মোসাম্মৎ জাবেদা বেগমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে ভর্তি হন এবং ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যোগদান করেন। ১৯৫৫ সালে সেখান থেকে এমএ পাস করেন। অবশ্য পড়াশোনার পাশাপাশি প্রায় দেড় বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আপার ডিভিশন ক্লার্ক (টউঅ) পদে চাকরিও করেন। এমএ পাস করার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ১৯৫৫ সালে সাবরেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ পান সিলেটের বিয়ানীবাজারে। ১৯৫৫ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন স্থানে সাবরেজিস্ট্রার পদে চাকরি করেন। ১৯৮১ থেকে ৮৭ সাল পর্যন্ত উজ বা জেলা রেজিস্ট্রার পদে চাকরি করে অবসর গ্রহণ করেন।
সুফি ওসমান আলী (রহ.) শিক্ষকতা, সাবরেজিস্ট্রার, জেলা রেজিস্ট্রার পদে চাকরি করলেও তার জীবন ছিল সামগ্রিক মূল্যায়নে উজ্জ্বল। ৩২ বছর সাবরেজিস্ট্রার ও জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে চাকরি করলেও তিনি কোনোদিন এক পয়সা ঘুষ গ্রহণ করেননি। ইসলামের প্রতিটি নীতি ও আমলকে সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করে বাস্তব জীবনে যথাযথভাবে পালন করতেন তা।
১৯৬২ সালে ছারছীনা শরিফের মরহুম পীর সাহেব আবু জাফর মোহাম্মদ ছালেহ (রহ.)-এর হাতে বায়াত গ্রহণ করেন। এখানে সূচনা ঘটেনি তার আধ্যাত্মবাদ চর্চা; এর আগে থেকেই একজন কামেল অলি ছিলেন শাহ সূফি ওসমান আলী।
সমাজের সর্বস্তরের মানুষের জন্য আদর্শ ও কল্যাণের অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন ওসমান আলী। গোটা জীবনটাকে বিলিয়ে দিয়েছেন মানবতা কল্যাণে। দ্বীন ইসলামের খেদমতে। ১৩টি মসজিদ ও ৫টি মাদরাসাসহ বহু স্কুল-কলেজে অনুদান দিয়েছেন এবং সথাযোগ্য সাহায্য করেছেন। একক প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন বেশ কয়েকটি মসজিদ ও মাদরাসা। প্রত্যক্ষদর্শীরা অনেকেই এমন মন্তব্য করেছেন ‘এমন মানুষ মিলবে না আর এধরাতে।’
ওসমান আলী (রহ.) ছিলেন ব্যক্তিজীবন, পারিবারিকজীবন ও সমাজজীবনে অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। সংসারজীবনে তিনি ছিলেন ১১ সন্তানের জনক। মহান প্রভুর রহমত ও বরকতে এবং তার ঐকান্তিক চেষ্ঠায় তার সব সন্তান এবং জামাতারা একই সঙ্গে দ্বীনদার, পরহেজগার, সামাজিক ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। ১৯৮৮ সালে একা এবং ২০০৫ সালে সস্ত্রীক পবিত্র হজব্রত পালন করেন ওসমান আলী। ২০১৪ সালের ২০ জুন জুমাবার রাত ১টায় অসংখ্য শুভাকাক্সক্ষী ও সৎ সন্তানদের রেখে বর্ণাঢ্য জীবনের ইতি টানেন ওমসান আলী। মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে পাড়ি জমান পরকালীন জগতে।
দরবারে এলাহীতে আরজি রইলো, হে আমার বর! এপাড়ের মতো ওপাড়েও তুমি সম্মানিক করো তোমার এ নেক বান্দাকে। আমিন। ছুম্মা আমিন।
লেখক : মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, সিইও, আইটিভি ইউএসএ।
Jun 24, 2020 ০
Jun 24, 2020 ০
Jun 24, 2020 ০
Jun 24, 2020 ০
Jun 24, 2020 ০
ফেরদৌস আহমেদ বাবুল মফস্বল সাংবাদিকতার অনুপ্রেরণা
Apr 16, 2020 ০
নেত্রকোনা অনলাইন রিপোর্টার্স ক্লাবের উদ্যেগে সমাজ...
Feb 23, 2020 ০
নেত্রকোনায় আগামীকাল থেকে দুই দিন ব্যাপী বসন্তকালীন...
Feb 13, 2020 ০
স্মৃতির পাতায় ডাঃ আব্দুল হামিদ খান : আলী আমজাদ
Feb 05, 2020 ০
Jun 24, 2020
Jun 24, 2020
Jun 24, 2020
Jun 24, 2020
Jun 24, 2020
May 19, 2018
May 08, 2018
Nov 25, 2018
Jul 10, 2018
Jul 06, 2018
Jul 29, 2018