শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫০ অপরাহ্ন
নেত্রকোণার আলো ডটকম ডেস্ক:
সারা দেশের বেসরকারি পাঠাগারগুলোর জন্য বই কেনার বরাদ্দ থেকে গত তিন অর্থবছরে ১০ কোটি টাকার প্রায় অর্ধেকই খরচ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবার নিয়ে লেখা বই কিনতে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য কেনা ৯১২টি বইয়ের মধ্যে ৭৯টি বই মানহীন বা বিতরণ অযোগ্য হিসেবে বাতিল করা হয়েছে। এ বইগুলোর অধিকাংশই বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক।
বাতিল হওয়া বইগুলোর প্রায় ৮ হাজার কপি এখন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের গুদামে পড়ে আছে। বইগুলো নিয়ে কী করা হবে, সেই বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম জানিয়েছেন, “বইয়ের বিষয়, কাগজ ও ছাপার মান বিবেচনা করলে আরও বেশি বই বাতিল হওয়া উচিত ছিল। জনগণের করের টাকায় কেনা বইগুলো ব্যবহারের উপযোগী না হলে পাঠকের মননশীলতার ক্ষতি হয়।”
গ্রন্থকেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাঠাগারের জন্য বই কেনায় ৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই কেনায় খরচ হয় অর্ধেকের বেশি। একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, বই নির্বাচনের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইয়ের জন্য নির্ধারিত ৪০ শতাংশ কোটার বাইরেও রাজনৈতিক স্বার্থে একই বিষয়ের বই বারবার তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা বলেন, “বই নির্বাচন কমিটি থাকলেও বাস্তবে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রকাশকের সঙ্গে সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে স্থানীয় পাঠাগারের পাঠকের চাহিদা উপেক্ষিত হয়েছে।”
নড়াইলের শতবর্ষী রামনারায়ণ গণগ্রন্থাগারের সহকারী গ্রন্থাগারিক কাজী গোলাম মোস্তফা জানান, “কখনোই আমাদের চাহিদা অনুযায়ী বই দেওয়া হয়নি। আমরা পাঠকদের চাহিদা অনুযায়ী রবীন্দ্রনাথ, নজরুল বা জনপ্রিয় লেখকের বই চাই। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা অচেনা লেখকদের বই বারবার দেওয়া হয়।”
বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি সাঈদ বারী অভিযোগ করেছেন, “বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এই বই কেনায় ব্যাপক বাণিজ্য হয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু প্রকাশনীর বই কেনা হয়েছে। এতে করে মানহীন বই নির্বাচিত হয়েছে।”
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বই কেনার প্রক্রিয়া এবং মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বই নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও পাঠক চাহিদা অনুযায়ী করতে হবে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে কেনা বইয়ের বাজেট: ৩ কোটি ১৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।
বাতিল বইয়ের সংখ্যা: ৭৯টি।
বাতিল বইয়ের মূল্য: ৩৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
বরাদ্দের ৫০% খরচ হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইয়ে।
এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের মন্তব্য:
“নির্ধারিত কোটা অনুযায়ী বই কেনা হয়েছে। তবে বই নির্বাচন ও মান নিয়ন্ত্রণে আরও নজরদারি প্রয়োজন,” জানিয়েছেন গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জনগণের অর্থ অপচয় রোধ এবং পাঠাগারের কার্যকারিতা বাড়াতে বই কেনার প্রক্রিয়ায় সংস্কার আনা জরুরি।