বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৮ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক, নেত্রকোণার আলো ডটকম:
সরকার সঞ্চয়পত্রের বিক্রিতে হ্রাস রোধ করতে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অবসরপ্রাপ্তদের জন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হচ্ছে, পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা প্রতি তিন মাসের পরিবর্তে প্রতি মাসে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে শুধুমাত্র নারী ও ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে নাগরিকদের জন্য পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফা প্রতি মাসে দেওয়া হয়।
গত মঙ্গলবার অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে।
সভার সূত্র জানায়, বর্তমানে সঞ্চয়পত্রে দ্বিতীয়বার বিনিয়োগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা যায় না। তবে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ভবিষ্যতে কেউ সঞ্চয়ের বিনিয়োগ না তুললে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্বিতীয়বার বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে।
সভা শেষে এনবিআর চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, এতদিন পেনশনার সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগকারীরা তিন মাস পর পর মুনাফা পেতেন। এখন থেকে প্রতি মাসে মুনাফার অর্থ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সঞ্চয়পত্রের সুদহার বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশি মেরিনার, পাইলট ও কেবিন ক্রুদের ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তও সভায় গৃহীত হয়েছে।
বর্তমানে তিন মাস মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দেওয়া হচ্ছে ১১.০৪ শতাংশ, পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১১.৫২ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১১.২৮ শতাংশ এবং পেনশন সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১১.৭৬ শতাংশ। সূত্র জানিয়েছে, মুনাফার হার শূন্য দশমিক ৫ ভাগ থেকে দেড় ভাগ পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। নতুন এই মুনাফার হার ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
সরকারের লক্ষ্য, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া কমানো।
২০২২-২০২৩ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ নেওয়া কমিয়ে দেয়, যেখানে নিট ঋণ নেওয়ার পরিমাণ ছিল ঋণাত্মক ৩,৩৪৭ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ঋণাত্মক ৭,৩১০ কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫,৪০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশ কমানোর পর থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ধস নেমেছে। মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের সঞ্চয়ের সক্ষমতা কমে গেছে, যার ফলে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একই সঙ্গে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয় এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বন্ধ করার শর্ত আরোপ করা হয়।
কর্তৃপক্ষ আশা করছে, নতুন এই নিয়মগুলো সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে এবং বাজারে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়াবে।