বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ অপরাহ্ন

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের ১০০০ দিন: লড়াই কি এখন ‘রোবট যুদ্ধে’ রূপ নিচ্ছে?

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের ১০০০ দিন: লড়াই কি এখন ‘রোবট যুদ্ধে’ রূপ নিচ্ছে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, নেত্রকোণার আলো ডটকম:

ইউরি শেলমুক, ইউক্রেনে সামরিক সরঞ্জাম তৈরির একটি প্রতিষ্ঠানের সহপ্রতিষ্ঠাতা, ড্রোন সিগন্যাল জ্যামার তৈরির জন্য গত বছর একটি প্রতিষ্ঠান গড়েন। শুরুর দিকে তার তৈরি সামরিক সরঞ্জামের চাহিদা ছিল কম, তবে এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। তার প্রতিষ্ঠান এখন প্রতি মাসে ২,৫০০টি সরঞ্জাম তৈরি করছে, এবং ক্রেতাদের এসব সরঞ্জাম পেতে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

২০২৩ সালের গ্রীষ্মের পর ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শুরু করলে, পরিস্থিতি বদলে যায়। ইউক্রেন অভিযোগ করে যে, রুশ বাহিনী ব্যাপকভাবে অজ্ঞাত আকাশযান ব্যবহার করছে, এবং যুদ্ধক্ষেত্রে প্রচুর ভূমিমাইন ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে ইউক্রেনীয়রা বুঝতে পারে যে, যুদ্ধে নতুন ‘গেম চেঞ্জার’ এসেছে।

এই সময় থেকেই ইউক্রেনের সামরিক সরঞ্জাম তৈরির শিল্প গতি পায়, এবং ইউক্রেনে গড়ে ওঠে ৮০০টিরও বেশি নতুন প্রতিষ্ঠান। যুদ্ধের ১০০০তম দিনে, ইউক্রেন এখন এক নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

প্রথমে আকাশপথে হামলা ছিল প্রধান, কিন্তু পরে স্থল ও সমুদ্র যুদ্ধে ড্রোন ও ড্রোনবিধ্বংসী প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারও ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউক্রেনের আইনপ্রণেতা হালইয়ানা ইয়ানচেঙ্কো বলেন, ‘এ মুহূর্তে বিশ্বের মধ্যে ইউক্রেনের সামরিক শিল্প সবচেয়ে দ্রুত বিকাশমান খাতগুলোর একটি।’

ইউক্রেন ও রাশিয়া মিলিয়ে প্রতি বছর প্রায় ১৫ লাখ ড্রোন তৈরী হচ্ছে, যার বেশিরভাগই ছোট আকারের এবং শত্রুর লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে দূর থেকে পরিচালনা করা যায়। এই ড্রোনগুলো পরিচালনার খরচ মাত্র কয়েক শ ডলার।

ইউক্রেনে বর্তমানে প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান ড্রোন প্রতিরোধী ব্যবস্থা তৈরিতে যুক্ত, এর মধ্যে অন্যতম ইউরি শেলমুকের প্রতিষ্ঠান আনওয়েভ, যা ড্রোনের সিগন্যাল ব্লক এবং কম্পিউটার সিস্টেমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

রাশিয়া ও ইউক্রেন দু’পক্ষই এখন যন্ত্র ব্যবহার বাড়াচ্ছে, কারণ এতে ক্ষয়ক্ষতি কম হয় এবং যুদ্ধক্লান্তি এড়ানো যায়। ইউক্রেন তাদের বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করতে বিশেষ কৌশল অবলম্বন করছে, আর রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার দিকে ঝুঁকছে। সম্প্রতি, উত্তর কোরিয়ার সেনারা রুশ বাহিনীর হয়ে লড়াইয়ে অংশ নিতে শুরু করেছে।

এ বছর, ইউক্রেনের রাষ্ট্র-সমর্থিত প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্রেভওয়ান জানায়, দেশটিতে এখন ১৬০টির বেশি প্রতিষ্ঠান স্বয়ংক্রিয় বা মানববিহীন স্থলযান বানাচ্ছে। এসব যানের মাধ্যমে রসদ সরবরাহ, আহতদের সরিয়ে আনা এবং দূরনিয়ন্ত্রিত মেশিনগান বহন করা হচ্ছে।

রুশ বাহিনীও এখন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। ইউক্রেনের কৌশলগত শিল্প-মন্ত্রী হারম্যান স্মেতানিন বলেন, “দূরনিয়ন্ত্রিত অস্ত্র, বিশেষত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা পরিচালিত অস্ত্রের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে।”

এদিকে, এই শিল্পে দক্ষ কর্মীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান টেক ফোর্সের জরিপে দেখা গেছে, দক্ষ কর্মীর অভাবে ৮৫% প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম ইউক্রেনের বাইরে সরানোর পরিকল্পনা করছে।

এটি স্পষ্ট যে, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ এখন শুধু অস্ত্রের যুদ্ধ নয়, এটি প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এক নতুন যুগে প্রবেশ করছে, যেখানে যুদ্ধের মূল চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়াচ্ছে ‘রোবট যুদ্ধে’।

( নেত্রকোণার আলো ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। )

Comments are closed.




© All rights reserved © 2024 www.netrakon-r-alo.com