বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫১ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক নেত্রকোণার আলো ডটকম :
কয়েক দশক ধরে বৈরি সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও, ইরান ও সৌদি আরব কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। চীনের মধ্যস্থতায় গত বছর এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন শুরু হয়, যা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে।
সাম্প্রতিক সময়ের কিছু কূটনৈতিক আদান-প্রদানে এ সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরঘাচি সম্প্রতি সৌদি আরবে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
ইতিহাস ও ধর্মীয় পার্থক্য থেকে বৈরিতার জন্ম
ইরান বিপ্লবের পর থেকেই ধর্ম নিয়ে ইরান ও সৌদি আরবের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য দ্বন্দ্বের মূলে রয়েছে। ইরান নিজেকে শিয়া মুসলিমদের নেতা হিসেবে গড়ে তুলেছে, যেখানে সৌদি আরব সুন্নি মতবাদ অনুসরণ করে ইসলামিক বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করে। ২০১০ সালের আরব বসন্তের সময় এই বিরোধ আরও তীব্র হয়। সৌদি আরব শঙ্কিত ছিল যে ইরান গঠনমূলক প্রভাব বিস্তার করে এই আন্দোলনকে ব্যবহার করতে পারে।
ইরান-সৌদি সম্পর্কে উত্তেজনার মূল কেন্দ্রবিন্দু ইয়েমেন। ইরান সমর্থিত হুতি মিলিশিয়ারা সেখানে সৌদি সমর্থিত সরকারকে হটানোর চেষ্টা করে, অন্যদিকে সৌদি আরবের নেতৃত্বে সুন্নি দেশগুলোর জোট হুতিদের মোকাবিলা করছে। মূলত ইরানের প্রভাব ঠেকাতে চায় সৌদি আরব।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে সৌদি আরবের বেশ কিছু কৌশলগত সুবিধা রয়েছে। সৌদি আরব বুঝতে পেরেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করা সম্ভব নয়, বিশেষত ২০১৯ সালে ইরানের হামলায় তেলের স্থাপনায় ক্ষতির পর। তাছাড়া সৌদি আরব চায় ইরান হুতি মিলিশিয়াদের প্রভাবিত করে তাদের আক্রমণ বন্ধ করুক।
অন্যদিকে, নিষেধাজ্ঞা, অর্থনৈতিক দুর্দশা এবং অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার কারণে ইরান সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চায়। পরমাণু সমঝোতা নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে সফলতার অভাবে ইরান বিকল্প পথ খুঁজছে। সেই লক্ষ্যে প্রতিবেশী সৌদি আরবের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে আগ্রহী ইরান।
বিশ্লেষক সেবাস্টিয়ান সোনসের মতে, সৌদি আরব এখন এমন একটি অবস্থান নিতে চায় যেখানে সে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে পারে। এর ফলে সৌদি আরব তেহরানের সঙ্গে সংলাপের রাস্তা উন্মুক্ত রাখতে পারছে এবং এতে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাও বজায় থাকবে।
ইরান-সৌদির এই সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের চেষ্টা ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা নিয়ে আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।