শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, নেত্রকোণার আলো ডটকম:
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন গাজায় চলমান সংঘাতের মানবিক বিপর্যয়কে গভীরভাবে তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় নিহত ৩৪,৫০০ জনের মধ্যে যাদের তথ্য যাচাই করা হয়েছে তাদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু, যা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের নিয়মিত লঙ্ঘনের একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত। নিহতদের মধ্যে একদম নবজাতক থেকে শুরু করে ৯৭ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধাও রয়েছেন। শিশু নিহতদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এদের মধ্যে ৪৪ শতাংশের বয়স ৫ থেকে ৯ বছরের মধ্যে এবং বাকিদের মধ্যে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী।
জাতিসংঘের মতে, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অস্ত্র ব্যবহারের কারণে একাধিক পরিবার সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছে। এমনও হয়েছে যে একই আক্রমণে একটি পরিবারের পাঁচ বা তার বেশি সদস্য নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের প্রধান ভলকার তুর্ক সরাসরি ইসরায়েলকে যুদ্ধের আন্তর্জাতিক নীতি মেনে চলার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন এবং অভিযোগ করেছেন যে ইসরায়েল যুদ্ধের নিয়মকে অবজ্ঞা করছে। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, বেসামরিক মানুষের ওপর এই ধরনের ‘বিস্তৃত বা নিয়মতান্ত্রিক’ হামলা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যদি এই সহিংসতা কোনো জাতিগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে, তবে এটি গণহত্যার অপরাধ হতে পারে। এই ধরনের অভিযোগ আর্ন্তজাতিক মহলে ইসরায়েলের সামরিক কৌশল এবং এর সম্ভাব্য মানবিক প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর ইসরায়েলের জেনেভা মিশন এটিকে “অযাচাই করা তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি” বলে অভিযোগ করেছে এবং সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরায়েল বলছে, জাতিসংঘ তাদের প্রতিবেদন তৈরিতে সঠিক তথ্য যাচাই করেনি। এছাড়াও ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা গাজায় হামাসের মতো সশস্ত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হচ্ছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতির ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় ৪৫,৫০৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,০২,৬৮৪ জন আহত হয়েছেন। এই সংখ্যা গাজায় মানবিক পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে, তার একটি পরিষ্কার চিত্র তুলে ধরেছে।
জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এমন আক্রমণ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং রাজনৈতিক নেতাদের আরও কার্যকর ভূমিকা পালনে প্ররোচিত করতে পারে।
এদিকে, একই দিনে আরেকটি উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক ঘটনাও ঘটে। ৬৭তম গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডসে বিখ্যাত মার্কিন সংগীতশিল্পী বিয়ন্সে রেকর্ড ১১টি মনোনয়ন পেয়েছেন, যা তার ক্যারিয়ারে মোট ৯৯টি মনোনয়নে পৌঁছেছে। এত মনোনয়ন এর আগে কোনো শিল্পী পাননি। বিয়ন্সে তার স্বামী জে-জেডের ৮৮টি মনোনয়নের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছেন। ২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি লস অ্যাঞ্জেলসে অনুষ্ঠেয় গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডসে তার এই মনোনয়নগুলোর ফলাফল ঘোষিত হবে।
এই সাংস্কৃতিক অর্জনটি যদিও গাজায় চলমান সংকটের বাস্তবতার থেকে অনেকটাই দূরে, তবে এটি বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সাংস্কৃতিক এবং মানবিক সংবেদনশীলতার ভারসাম্য বোঝায়।