রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২০ অপরাহ্ন
শেরপুরে বাণিজ্যিকভাবে বস্তায় আদা চাষ শুরু হয়েছে। বাড়তি খরচ, কীটনাশক ও সেচ সুবিধার প্রয়োজন না হওয়ায় দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে অন্যান্য কৃষকদের মাঝে। বস্তায় আদা চাষের জন্য আলাদা করে জমির দরকার নেই। এই পদ্ধতিতে একদিকে যেমন মাটিবাহিত রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে বস্তা অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। বিশেষ করে ছায়াযুক্ত পরিত্যক্ত জায়গাতে এই পদ্ধতিতে চাষ করা যায়।
এছাড়াও রোগ-বালাই কম হওয়ায় জেলার ৫টি উপজেলায় অনেক কৃষক বাণিজ্যিকভাবে করছে আদা চাষ। এবার জেলার ৫টি উপজেলায় ৬ লাখ ৯৩ হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, আগামী বছর বস্তায় বাণিজ্যিকভাবে আদা চাষ হবে এবারের চেয়ে দ্বিগুণ।
সরেজমিনে দেখা যায়, শেরপুর সদর উপজেলার গাজির খামার এলাকার কৃষক তারিফ হাসান ব্যবসার পাশাপাশি তার বাড়ির পাশে পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষ করেছেন। তার এক বিঘা জমিতে ৪ হাজার বস্তায় লাগিয়েছেন আদা। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। তবে যে পরিমাণ ফলন হয়েছে তাতে তারিফ আশা করছেন সব মিলিয়ে তার ৩ লক্ষাধিক টাকা আয় হবে।
এ ব্যাপারে আদা চাষি তারিফ হাসান বলেন, সদর উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগীতা নিয়ে নতুন পদ্ধতিতে বস্তায় আদা চাষ করেছি। আমি আশাবাদী এই পদ্ধতিতে আদা চাষ করে অল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় যায়। আমার কাছ থেকে অন্তত ৩০ জন কৃষক আদা চাষের পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। আমি সামনের বছর আরও জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করবো।
স্থানীয় কৃষক ছমির উদ্দিন বলেন, আমি আগে মাটির নিচে আদা চাষ করতাম। কিন্তু লাভের মুখ দেখতে পায়নি। এবার বস্তায় আদা চাষে লাভবান হয়েছি।
কৃষক আহমেদ আলী বলেন, আমার বড় একটা পরিত্যক্ত যায়গা অনেকদিন থেকে পতিত পড়ে আছে, যা সম্পূর্ণ বাঁশবাগানের নিচে। এখানে আদা চাষ হবে কল্পনাও করতে পারিনি। এখানে আদা চাষ করাতে আমার সংসারে বড় একটা আয়ের ব্যবস্থা হয়েছে।
এ ব্যাপারে শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাবরিনা বলেন, বস্তা পদ্ধতিটিকে জনপ্রিয় করতে আমরা সমস্ত উপজেলায় মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। কৃষকদের এই পদ্ধতিতে আদা চাষ করতে আগ্রহী করছি। এছাড়াও মাঠ পর্যায়ে সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগীতা প্রদান করছি। শ্রীবরদী উপজেলায় গতবারের চেয়ে এবার আবাদ বেড়েছে। সামনের মৌসুমে আরও আবাদ বাড়বে।
শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর বলেন, এবার জেলার ৫টি উপজেলায় ৬ লাখ ৯৩ হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছে। এরা সবাই সফল। আদা চাষে আগ্রহী করতে আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। এছাড়াও কৃষি প্রণোদনা, সার, বিষ দিচ্ছি। এছাড়াও বস্তার মাটি তৈরি থেকে শুরু করে আদা উত্তোলন পর্যন্ত সকল প্রকার কৃষি পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।