বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০২ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, নেত্রকোণার আলো ডটকম:
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভের কারণে সৃষ্ট অচলাবস্থা দুপুরে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে। আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল মহাখালী রেলগেট এলাকায় পৌঁছালে আন্দোলনরত রিকশাচালকরা দ্রুত সড়ক ছেড়ে পালিয়ে যায়। এসময় স্থানীয় পথচারীরাও তাদের ধাওয়া করেন।
সকাল থেকেই আগারগাঁও, কল্যাণপুর, গাবতলী, টেকনিক্যাল, মহাখালী, মোহাম্মদপুর, পল্লবী এবং ডেমরা এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। এর ফলে এসব এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় এবং জনদুর্ভোগ চরমে ওঠে।
মহাখালী রেলগেট এলাকায় রেললাইনের ওপর অবস্থান নেওয়ায় ঢাকা-টঙ্গী রুটের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একইসঙ্গে মহাখালী ও আশপাশের এলাকায় যান চলাচলও মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়।
রিকশাচালকদের রাস্তা ছাড়ার অনুরোধ করলে তারা পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়ে আক্রমণ করে। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে রিকশাচালকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে সড়ক ছাড়ে। তবে কিছু চালক রেলগেটের পাশে অবস্থান নিয়ে আবারও প্রতিবাদ শুরু করেন।
বিক্ষোভরত চালকরা অভিযোগ করেন, হাইকোর্টের নির্দেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত তাদের জীবিকার ওপর আঘাত করেছে। মহাখালী এলাকায় সজীব নামে এক রিকশাচালক বলেন,
“আমার পরিবারে আমি একমাত্র উপার্জনকারী। রিকশা চালানো বন্ধ হলে আমার সংসার চলবে কীভাবে? আমরা তো চুরি বা ছিনতাই করতে পারব না।”
অন্য একজন চালক অভিযোগ করেন,
“আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিলাম। বিনা উসকানিতে আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করা হলো। আমাদের ন্যায্য দাবি না মানা পর্যন্ত রাস্তা ছাড়ব না।”
গেল মঙ্গলবার হাইকোর্ট রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে তিন দিনের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। একইসঙ্গে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর না করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।
এই নির্দেশনার পর বুধবার দয়াগঞ্জ মোড়ে রিকশাচালকরা প্রথম সড়ক অবরোধ করেন। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই পুলিশ সদস্য আহত হন।
সড়ক ও রেলপথে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পুলিশের অতিরিক্ত সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। মিরপুর-১০ এলাকায় যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইয়াসিনা ফেরদৌস। তবে মহাখালী এলাকায় এখনো কিছু বিক্ষোভকারীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
বিক্ষোভের কারণে রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে যানজট চরম আকার ধারণ করেছে। মহাখালী এলাকায় কিছু বিক্ষোভকারী শপিংমলে ভাঙচুর চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা এবং দোকান মালিকরা অনেকেই শপিংমল বা বাড়ির ভিতরে আশ্রয় নিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত সমস্যার সমাধান করে জনদুর্ভোগ কমানোর চেষ্টা করছে। তবে বিক্ষোভকারীদের দাবি এবং আদালতের নির্দেশনার মধ্যে সমাধান খুঁজে বের করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।