বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৪৩ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, নেত্রকোণার আলো ডটকম:
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, আমরা চাই দেখাতে সারা পৃথিবীকে দেখাতে যে, আমাদের এই দেশটা সম্প্রীতির দেশ। আমরা সবাই মিলে মিশে একসাথে থাকি। আমার ধর্ম যাই থাকুক না কেন আমরা সব ধর্মের উৎসবে অংশ গ্রহণ করতে পারি। শিল্পকর্ম একেবারে সমাজের কেন্দ্রে স্থাপিত হতে পারে। জনগণের মানুষের মাঝে যেন উৎসব নিয়ে আসতে পারে। উৎসবমুখর বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই।আমরা চিন্তা ভাবনা করি। আমরা খুবই পরিস্কারভাবে বলতে চাই ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী না আদিবাসী শব্দটা আমরা ব্যবহার করতে চাই। সকল আদিবাসীদের সাথে আমরা থাকতে চাই। বাংলাদেশের সংবিধান যখন পুন:লিখিত হচ্ছে,সংবিধানের ৪ এর ১ অনুচ্ছেদে দেখবেন লেখা আছে শে মুজিবুরের ছবি সব জায়গায় টানাতে হবে। ওগুলো আমরা টানাচ্ছিনা যেহেতু সে একইভাবে আমরা দাবি করবো ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর বদলে সাংবিদানিকভাবেই আমরা যখন নতুন বাংলাদেশ রচনা করছি,আমরা যেন বলতে পারি আদিবাসী । আর এই আদিবাসীদের জন্যে সারাদেশে সকল আদিবাসী –বাঙালী মিলে আমরা যেন এক সাথে একটা সুখী পরিবার গড়ে তুলতে পারি। বর্ণ যাই হোক ,আমার ধর্ম যাই হোক ,আমার পথ যাই হোক, মত যাই হোক,সবকিছুর মিলন ক্ষেত্র বাংলাদেশেএইটাই যেন পৃথিবীর বুকে খুব পরিস্কার হয়ে যায়।
তিনি শুক্রবার সন্ধ্যায় নেত্রকোণায় দুর্গাপুরের বিরিশিরি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি আয়োজিত একাডেমি প্রাঙ্গণে ঐতিহ্যবাহী ওয়ানগালা উৎসবের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথিরি বক্তব্যে দেয়া এসব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাসের সভাপতিত্বে আলোচনায় শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদছাড়াও বক্তব্য রাখেন, উপপরিচালক এস এম শামীম আকতার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাভিদ রেজওয়ানুল কবীর, দুর্গাপুর অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন তাহমিদুল আলম নোমান,মণীন্দ্রনাথ মারাক, ফাদার পাওয়েল, কবি জন ক্রসওয়েল খকশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির পরিচালক গীতিকার সুজন হাজংসহ অন্যরা।
নেত্রকোণার দুর্গাপুরে পূজা-অর্চনা, নাচ-গান এবং শুভেচ্ছা বিনিময়ে গারো সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক উৎসব ‘ওয়ানগালা’ উদযাপিত হয়েছে।এতে গারো, হাজং জনজাতিছাড়াও বাঙালি জনগোষ্ঠীর মানুষেরা অংশ নেয়ায় সম্প্রীতির মিলন মেলায় পরিণত হয় উৎসব। বিকালে ৩ টার দিকে শুরু উৎসবে গারো জনজাতির মানুষেরা তাদের ঐতিহ্যগত পোশাক পরিধান করে নিজস্ব বাদ্যবাজনা বাজিয়ে অতিথিদের বরণ করে নেয়া হয়। থক্কা ও শস্য উৎসর্গের মধ্যদিয়ে শুরু হয় উৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা।
আলোচনা শেষে নিজেদের সংস্কৃতির অতি পরিচিত গানের তালে তালে নেচে গেয়ে পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ওয়ানগালা উৎসব বিদায়ের সুর বাজে শুক্রবার রাত ৯টা নাগাদ।
আয়োজকেরা বলছেন, শস্য দেবতা ‘মিশি সালজং’ পৃথিবীতে প্রথম ফসল দিয়েছিলেন এবং তিনি সারাবছর পরিমাণ মতো আলো-বাতাস, রোদ-বৃষ্টি দিয়ে ‘ ভালো শস্য ফলাতে সহায়তা করেন। তাই নতুন ফসল ঘরে তোলার সময় ‘মিশি সালজং’কে ধন্যবাদ জানাতে উৎসবের আয়োজন করে তারা।
গারো জনজাতির মনীন্দ্র মারাক বলেন, আমরা ওয়ানগালা উৎসব আসলে আনন্দে মেতে উঠি।এই উৎসব আমাদের জাতিসত্বার পরিচয় বহন করে।ওয়ানগালা আমাদের জনজাতির ভিত্তির পরিচয় করিয়ে দেয়।
উৎসবে অংশ নিয়ে বিনীতা ম্রং বলেন, আমরা দিনটাতে আমাদেরিঐতিহ্যের রং বেরংয়ের পোশাক পড়ি। আনন্দ করি।
আয়োজকদের পক্ষে জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলছেন, নেত্রকোণার কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরে অনেক আদিবাসী জনগোষ্ঠী বসবাস করে আসছে। তাদের সংস্কৃতি রক্ষা ও বিকাশে আমরা এই উৎসবের আয়োজন করেছি।ধর্ম যার যার উৎসব সবার। সম্প্রীতির মিলন এই উৎসবকে মহিমান্বিত করেছে।