রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:২০ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, নেত্রকোণার আলো ডটকম:
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, সমকামিতাসহ পশ্চিমা অসভ্যতা আমদানি করার পায়তারা করলে বুকের রক্ত দিয়ে আমরা প্রতিহত করব।
তিনি বলেন, প্রথম দিন থেকেই আমরা আপনাদের সহযোগিতা করছি, এখনো করছি এবং ভবিষ্যতেও করবো এ ধরনের ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। তবে সরকারকে আমাদের কাছ থেকে সহযোগিতা নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের আন্তরিকতার পরিচয় দিতে হবে। দেশের মানুষের প্রশ্নে, দেশের মানুষের স্বার্থের প্রশ্নে, দেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে, ইসলামের প্রশ্নে কারো চেহারার দিকে তাকিয়ে কথা বলার ফুসরত আমাদের নাই। আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে সংস্কারের নামে বেশ কিছু বিষয়কে অন্তর্ভুক্তি করার পায়তারা চলছে উল্লেখ করে মামুনুল হক বলেন, এসবের তার মধ্যে একটা হল ট্রান্সজেন্ডার। সমকামিতাসহ পশ্চিমা অসভ্যতা ট্রান্সজেন্ডার এদেশে যদি আমদানি করার পায়তারা করা হয়, বুকের রক্ত দিয়ে আমরা প্রতিহত করব ইনশাল্লাহ। আরেকটি হচ্ছে, বৈবাহিক ধর্ষনের নামে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে স্বামী-স্ত্রীদের সম্পর্কটাকে একটা বিতৃষ্ণ সম্পর্কে এবং ঘরে ঘরে অশান্তির দাবানল জ্বালিয়ে দেওয়ার পয়তারা চলছে। এই বিষয়গুলোকে মানবতা বিরোধী অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করে, আল্লাহ প্রদত্ত স্বামীর অধিকারকে জলাঞ্জলি দিয়ে ঘরে ঘরে দাম্পত্যের আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। পশ্চিমা বিশ্বের পারিবারিক ব্যবস্থা ভেঙে খানখান হয়ে গিয়েছে। এখন তারা চায় মুসলিম বিশ্বের পরিবার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিতে। ভারতে নবীকে নিয়ে কটুক্তির প্রতিবাদ করে মামুনুল হক বলেন, ভারতীয় কূটনীতিককে ডেকে এর প্রতিবাদ জানান। প্রয়োজনে ভারতের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করুন। ওরা আপনার নবীকে গালি দিবে, আর আপনারা তাদের ইলিশ মাছ পাঠাবেন, এদেশের মানুষ সেটাকে ভালো চোখে দেখে না।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নেত্রকোণা শহরের মোক্তারপাড়া মাঠে বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিসের ‘ছাত্র জনতার বিপ্লবের সংঘটিত গণহত্যার বিচার ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে গণজাগরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে গণ সমাবেশ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের জেলা শাখার সভাপতি শাইখুল হাদীস আল্লামা জিয়া উদ্দিন।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের রাজনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে উল্লেখ করে আল্লামা মামুনুল হক বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশে প্রতিশোধের রাজনীতি করেছিল। সে প্রতিশোধ নিয়েছে দেশের মানুষের কাছ থেকে। প্রতিশোধ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কাছ থেকে। তার দল আওয়ামী লীগ থেকেও প্রতিশোধ গ্রহণ করেছে। শেখ হাসিনা জানতো ১৫ই আগস্ট তার বাবাকে হত্যা করার জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী। তিনি পঞ্চাশ বছর ধরে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নাটক সাজিয়েছিলেন যেন আওয়ামী লীগ আর বাংলাদেশের কোনদিন রাজনীতি করতে না পারে। লুটপাট গণহত্যাসহ এমন জঘন্য কাজ তারা করেছে যে দেশে আওয়ামী লীগের আর মুখ দেখানোর উপায় নেই। দেশে রাজনীতি করার ইচ্ছা থাকলে আওয়ামী লীগের প্রতি দুটি পরামর্শ দেন আল্লামা মামুনুল হক। তিনি বলেন, যদি এই দেশে রাজনীতি করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে আমার ১ নাম্বার পরামর্শ হলো- আপনারা গণ তওবার আয়োজন করুন। কারণ আপনাদের বড় অপরাধ হয়েছে যে এরকম একজন (শেখ হাসিনা) মানসিক বৈকল্যর শিকার মানুষকে এই জাতির উপর আপনারা বছরের উপর বছর চাপিয়ে রেখেছেন। এটা আপনাদের মস্ত বড় অপরাধ হয়েছে। এই জন্য আপনাদের তওবা করা দরকার। এজন্য সবরকম সহযোগিতা আমরা করব। দ্বিতীয় পরামর্শ হলো- পরামর্শ থাকবে, আওয়ামী লীগ নামটা পরিবর্তন করে ফেলেন। কারণ এই লীগ নামে যা কিছু হয় সবকিছুই আস্তে আস্তে ক্ষয় হয়ে যায়। এত হত্যার দাগ নিয়ে, এত রক্তের দাগ নিয়ে এই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের মানুষের সামনে আসতে পারবে না। তিনি আরো বলেন, স্বৈরশাসক হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ গ্রেপ্তার হয়েছেন, কারাগার বরণ করেছেন, কিন্তু দলের নেতাকর্মীদের ছেড়ে পালিয়ে যাননি। বেগম খালেদা জিয়া একাধিকবার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু তিনিও দেশ ছেড়ে পালাননি। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েও তিনি বছরের পর বছর অসুস্থ অবস্থায় নেতা কর্মীদের পাশে ছিলেন। ইতিহাস প্রমাণ করে, যে দেশের মানুষ হাসিমুখে প্রাণ দিতে জানে, যারা নিজেরা বাঁচতে শিখে তাদেরকে কেউ মারতে পারে না। অথচ শেখ হাসিনাকে নিজের তল্পিতল্পাসহ বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। এই পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা ঐতিহ্যবাহী এই দলটিকে সারা দেশের মানুষের সামনে কলঙ্কিত করে তুলেছে।
সংখ্যালঘুদের উপর আওয়ামী লীগের নজিরবিহীন নির্যাতনের বিষয়ে মামুনুল হক বলেন, আওয়ামী লীগ সংখ্যালগুদের ওপর যে নির্যাতন নির্যাতন চালিয়েছে তা নজিরবিহীন। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা যেটা করত, রাতের আঁধারে কালনাগিনী হয়ে সংখ্যালঘুদের ছোবল মারতো। আর দিনের আলোতে তারাই আবার ওঝা হয়ে ঝাড়তে আসতো। এইভাবে নাটক সাজিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতন চালিয়ে, তাদের বাড়িঘর দখল করে, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে। আবার তারা মায়া কান্না করে সংখ্যালঘুদের সহানুভূতি অর্জন করে তা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। এখন বাংলাদেশে শেখ হাসিনাও নাই, আওয়ামী লীগের রাজনীতিও নাই, সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ঘটনাও নাই।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমাদ, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবুল হাসনাত জালালী, সহ-বায়তুল মাল সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমানসহ অন্যরা।