শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ অপরাহ্ন
নেত্রকোণার আলো ডটকম ডেস্ক:
মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম প্রতিষ্ঠিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ জেলার মধ্যবর্তী স্থান শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে চারটি বিভাগ, আটজন শিক্ষক, এবং ৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয় একাডেমিক কার্যক্রম। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে বর্তমানে দেশের অন্যতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৭৫ একরের এই বিদ্যাপীঠ শুক্রবার (২২ নভেম্বর) তার ৪৬ বছর পূর্ণ করল। শিক্ষা, গবেষণা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এই দীর্ঘ পথচলাকে করেছে গৌরবময়।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে সুদীর্ঘ পরিকল্পনা। ১৯৭৬ সালের ১ ডিসেম্বর, উচ্চশিক্ষার প্রসারে তৎকালীন সরকার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।১৯৮০ সালের ২৭ ডিসেম্বর, জাতীয় সংসদে পাস হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৮০ (৩৭)। ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন, দুটি অনুষদের চারটি বিভাগে ৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয় একাডেমিক কার্যক্রম।
বর্তমানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে: শিক্ষক: ৪০৬ জন। শিক্ষার্থী: ১৫,০০০+ (বিদেশি শিক্ষার্থী: ২০ জন)। বিভাগ: ৩৬টি (৮টি অনুষদের অধীন)।
অফিসার-কর্মচারী: ৭৩৯ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে সুবিশাল স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, মুক্ত বাংলা, চিকিৎসা কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, মসজিদ ও মফিজ লেক।
শিক্ষা ও গবেষণায় অর্জন: বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে রয়েছে প্রায় ১,২৬,০০০ বই এবং ১৯,৪০০+ জার্নাল। অনলাইনে ই-বুক ও ই-জার্নাল পড়ার সুযোগ। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখন পর্যন্ত ৬২৪ জন পিএইচ.ডি এবং ৭৮৮ জন এম.ফিল ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে ১৬৪ জন পিএইচ.ডি এবং ৪৭ জন এম.ফিল গবেষণায় যুক্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে গবেষণা ও শিক্ষা বিনিময় চুক্তি করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: চীনের সাউথইস্ট ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইসলামিক থট (IIIT)।
ক্রীড়াক্ষেত্রে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অসংখ্যবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে: অ্যাথলেটিকস: সাতবার (ছাত্র) ও আটবার (ছাত্রী) চ্যাম্পিয়ন।
ফুটবল, ভলিবল, বাস্কেটবল, হ্যান্ডবল, ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট: বহুবার চ্যাম্পিয়ন তামান্না আক্তার, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী, জাতীয় পর্যায়ে ১০০ মিটার হাডেলস ইভেন্টে সাতবার স্বর্ণপদক অর্জন করেছেন।
চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম৫৩৭ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজ চলছে। ৯টি দশতলা ভবনের নির্মাণকাজ। ১১টি ভবনের উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণ। বিদ্যুৎ সাবস্টেশন, সোলার প্যানেল, এবং বিশুদ্ধ পানির জন্য গভীর নলকূপ স্থাপন। নতুন শ্রেণিকক্ষ ও আবাসন সংকট সমাধানে দ্রুত কাজ চলছে।
বিভিন্ন অর্জনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়টি কিছু সংকটেরও সম্মুখীন: গবেষণা ও আইটি খাতে বাজেটের ঘাটতি। শ্রেণিকক্ষ ও আবাসন সংকট। কিছু বিভাগের সেশনজট। মানসম্মত খাবার ও সুপেয় পানির অভাব।
২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রফেসর ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সাথে ধারাবাহিক মতবিনিময়ের মাধ্যমে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
৪৬ বছরের দীর্ঘ যাত্রায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ও গবেষণায় নিজেকে শীর্ষে নিয়ে যেতে বিশ্ববিদ্যালয়টি নিরলস কাজ করে চলেছে।